এই দশকের শেষদিকে ব্যর্থ হয়েছেন ক্লপও। ছবি : এএফপি
টানা তিন দশক পর আবারও লিগ শিরোপার স্বাদ পেয়েছে লিভারপুল। গত তিরিশ বছর ধরে হাজারো চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আবারও ইংলিশ ফুটবলের রাজা হয়েছে 'অল রেড'রা। দীর্ঘ তিরিশ বছরের এই যাত্রাটা কেমন ছিল? সেটিই জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে তিন পর্বের ধারাবাহিকে। আজ পড়ুন শেষ পর্ব
'ডালগ্লিশ! ডালগ্লিশ!'
এককালে এই শ্লোগান শুনলে রক্ত টগবগিয়ে উঠত কেনি ডালগ্লিশের। পেতেন আরও ভালো খেলার অনুপ্রেরণা। প্রতিপক্ষও বুঝতে পারত, স্কটিশ কিংবদন্তিকে আটকে রাখা সম্ভব হবেনা। খেলায় নিজের ছাপ রাখবেনই, গোল করে বা গোলে সহায়তা করে!
এই শ্লোগান ডালগ্লিশকে পরে অনুপ্রাণিত করে কোচ হিসেবেও। পাঁচ বছর লিভারপুলের কোচ ছিলেন, যার মধ্যে তিন বছরেই জিতেছেন লিগ। আর জয়ের এই ধারার পেছনে অন্যতম ভূমিকা তো দর্শকদেরই, যারা ডালগ্লিশ, ডালগ্লিশ করে চিৎকার করছেন!
দায়িত্ব ছাড়ার ঠিক দুই দশক পর অ্যানফিল্ডে ডালগ্লিশের কানে যখন এই শ্লোগান এল, অনুপ্রাণিত হওয়ার চেয়ে বিব্রত হলেন বেশি। খেলোয়াড় বা ম্যানেজারের নামে শ্লোগান না দিয়ে সাবেক খেলোয়াড়ের নামে এভাবে উচ্চগ্রামে শ্লোগান দেওয়ার অর্থ, মাঠের খেলায় কী হয় না হয়, তাতে দর্শকদের কিছু আসছে যাচ্ছে না। বর্তমান ম্যানেজার রয় হজসনের কাছেও এ ঘটনাটা বিব্রতকর।
লিভারপুল সেদিন নিজের মাঠে উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারছিল। ততদিনে ২০১০-১১ মৌসুমের ১৮ ম্যাচে আটবার হেরে ও চারবার ড্র করে লিভারপুল সমর্থকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গিয়েছে। হজসনের হাত থেকে প্রিয় ক্লাবের মুক্তি চান তাঁরা। শোনা যাচ্ছিল, পরবর্তী ম্যানেজার হিসেবে ক্লাবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান কেনি ডালগ্লিশ ফিরতে পারেন। তাই এই শ্লোগান।
কিন্তু কী এমন হয়েছিল যাতে হজসনের ওপর এত বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন লিভারপুলের সমর্থকরা? পিছিয়ে যাওয়া যাক ছয় মাস!মানহীন সব খেলোয়াড়দের পেয়েছিলেন হজসন। ছবি : এএফপফুলহামের মতো ক্লাব থেকে নতুন ম্যানেজার আনা হচ্ছে, অনেক লিভারপুল সমর্থক এমনিতেও খুশি ছিলেন না। হোক সে ফুলহাম কয়েকদিন আগেই ইউরোপা লিগের ফাইনাল খেলেছে, টুর্নামেন্টে হারিয়েছে জুভেন্টাসের মতো দলকে–তাতে কী? লিভারপুলের মতো ক্লাবের ম্যানেজার হবেন আরও নামীদামি কেউ।
নতুন ক্লাবের অধিকাংশ সমর্থকের এমন মনোভাবের মাঝেই প্রথম দিনে গুবলেট পাকিয়ে ফেললেন ইংলিশ ম্যানেজার রয় হজসন। জিজ্ঞেস করা হল, ম্যানেজার হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে?স্বাভাবিকভাবেই, উত্তরে প্রশ্নকর্তা আশা করছিলেন বিল শ্যাঙ্কলি, পাইসলি, জো ফাগান কিংবা কেনি ডালগ্লিশের মতো কোনো লিভারপুল কিংবদন্তির নাম।
হজসন হাসতে হাসতে জবাব দিলেন, 'আমার প্রিয় কোচ ডেভ সেক্সটন (সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার) ও ডন রেভি (সাবেক আর্সেনাল ম্যানেজার)।' ব্যস, লিভারপুল সমর্থকদের হজসন-বিদ্বেষের শুরুটা সেখান থেকেই।
বড় ক্লাবে এলেই যে রাতারাতি দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হয় না, তার উজ্জ্বল উদাহরণ হজসন। লিভারপুলের মতো ক্লাবের সমর্থকদের মন জুগিয়ে চলার কাজটা করতে পারলেন না। অ্যানফিল্ডে দর্শকদের সামনে দলকে খেলানোর অভিজ্ঞতা কেমন, এমন প্রশ্নের জবাবে বলে বসেন, 'সান সিরো (এসি ও ইন্টার মিলানের স্টেডিয়াম) ও ওল্ড ট্রাফোর্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)ও চমৎকার!'
যখন এসেছিলেন, ক্লাবের অবস্থা টালমাটাল। দেনায় দেনায় জর্জরিত লিভারপুল, নতুন মালিক খোঁজা হচ্ছে পাগলের মতো। নতুন আসা হজসন দল সাজানোর জন্য তেমন টাকা পয়সা পেলেন না। নিয়ে এলেন মাঝারি মানের অনেক খেলোয়াড়। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার হাভিয়ের মাচেরানো বুঝতে পেরেছিলেন, এই লোকের অধীনে খেলে সময়ক্ষেপণ করার মানে নেই। পাড়ি জমালেন বার্সেলোনায়। দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিয়ান পার্সলো (যার সঙ্গে ঝগড়া করে বেনিতেজ চাকরি খুইয়েছিলেন) হজসনের আমলেও দলবদল নিয়ে অযাচিত নাক গলানো শুরু করলেন। মাচেরানোর জায়গায় জুভেন্টাসে সুযোগ না পাওয়া মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান পোলসেনকে দলে আনলেন।
0 Comments